মর্ডান মেয়ে যখন হুজুরের প্রেমে (পর্ব:- ০১)
#গল্প:- মর্ডান মেয়ে যখন হুজুরের প্রেমে
#লেখক:- পিচ্চি লেখক
#পর্ব:- ০১















আমার নাম মুহাম্মাদ আবির। আমার বাসা গাইবান্ধা। আমার পরিবারে বাবা মা আর আমি। আমার বাবা হলেন একজন কৃষক। আমার মা গৃহিনী।
অনেক সুন্দর ও হাসি খুসি আমাদের পরিবার। কিন্তু একদিন হঠাৎ এক্সিডেন্ডে আমার মা বাব দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। আমি চাচার কাছে থাকতে শুরু করলাম কিন্তু চাচা সেটা পছন্দ করতো না। একদিন চাচা আমার হাতে ২০০০০ টাকা দেয়ে বলল চলে যেতে।
বুঝতে পারলাম িএখন আমার খরচ চালানো তাদের পক্ষে আর সম্ভব না। নিজের খরচ নিজেকেই চালাতে হবে। আপনাদের কে বলতেই ভুলে গেছি আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি এবং মাদ্রাসাতেও পড়েছি।
আব্বুর ইচ্ছা ছিল জেনারেলে লেখাপড়া করাবে আর আম্মুর ইচ্ছা ছিল আলেম বানাবে। তাই দুই জনের ইচ্ছা পূরণের জন্য দুই প্রতিষ্ঠানেই ভর্তি করেছিল। তবে আমি কলেজে যেতাম না মাদ্রসায় থাকতাম কলেজে ভর্তি হয়ে একদিনও কলেজে যাইনি । বাবা মা মারা যাওয়ার পর থেকে আর মাদ্রাসায় যাওয়া হয় না ।
আগামী কাল ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের প্রথম ক্লাস তাই আগামীকাল থেকে কলেজে ক্লাস করব। কাকা যে ২০০০০ হাজার টাকা দিয়েছিল সেখান থেকে কিছু টাকা দিয়ে বাসা ভারা নিলাম। তার পর হাতে দেখি মাত্র ৯০০০ টাকা আছে। সেই টাকা দিয়ে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনলাম।
তারপর বাসায় এসে রান্না করে খেয়ে ঘুমাতে গেলাম
।

শুয়ে চিন্তা করতে লাগলাম কেমন করে চলব। যে করেই হোক কালকে একটা চাকরি জোগার করতেই হবে। এই চিন্তা করতে করতে ঘুমিযে গেলাম। রাত ৩ টার দিকে উঠে ওজু করে তাহাজ্জুদের নামাজ পরলাম। নামাজ পরে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলাম। কেননা আল্লাহ তাহাজ্জদের সময় আল্লাস প্রথম আসমানে এসে বলে বান্দা তোর কি লাগবে আমি আল্লাহর কাছে চা তুই যা চবি আমি আল্লাহ তাই তোকে দিব।
কিছুক্ষণ পর ফজরের আযান দিল। তারপর মসজিদে গিয়ে নামাজ পরে বাসায় এসে কুরআন তেলাওয়াত করলাম।
তারপর নাস্তা বানালাম। নাস্তা বানাতে বানাতে কলেজের সময় হয়ে গেলো। তারপর গোছল দিয়ে কলেজে গেলাম। যদিও আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি তাও আজ আমার কলেজের প্রথম দিন কারণ আজকের আগে কোনো দিন কলেজে যাইনি।
গেট দিয়ে ঢোকার সময় সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে যেনো কোন এলিয়েন যাচ্ছে।
তাকিয়ে থাকবেই না কেন। আমার গায়ে একটা জুব্বা। মুখে দাড়ি। মাথায় টুপি।
তাকিয়ে থাকুক তাতে আমার কি? আমি নবি (সাঃ) এর সুন্নাত পালন করছি।
হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন ডাক দিল !
ডাক শুনে পেছনে ঘুরে দেখি একদল মেয়ে আমাকে ডাকছে। তার পর ডাক দিলে আমি তাদের কাছে গিয়ে বললাম- জি বলেন।
এই তুই কলেজে এই রকম পোশাক পড়ে আসছিস কেন?
জুব্বা, পাজামা টাখনুর উপরে কেন পরছিস? আবার মুখে দাড়িও রাখছিস!
আমি এতিম এজন্য আমার কাপরটা তেমন ভালো না। কেনার সামর্থও নেই।
আর টাখনুর উপরে পাজামা পরেছি কারণ এটা সুন্নাত।
নবিজি (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যাক্তি টাখনুর নিচে কাপড় পরবে তার ওই স্থানটি জাহান্মামের আগুনে জ্বলবে। আর দাড়ি রাখা সুন্নাত/ওয়াজিব তাই দাড়ি রেখেছি।
সেট আপ! তোকে ধর্ম সম্পর্কে এত জ্ঞান দিতে বলতে বলিনি। কালকে যেন এইরকম না দেখি। কাল থেকে টাখনুর নিচে পাজামা পড়বি আর দাড়িও কেটে আসবি।
আমার জীবন থাকতে আমি এই কাজ করতে পারবো না। এতে গুনা হবে আমার ও আপনাদেরও
।

দেখেছিস নিলা তোর মুখের উপর কথা বলছে। একে তো শাস্তি দিতে হয়।
হুম দিতে তো হবেই এই হুজুর তোর নাম কি?
জ্বি আমার নাম আবির।
তো তুই একটা কাজ কর এই কলেজের যে কোনো মেয়ের ওড়না ধরে টান দে, তাহলে তোকে যেতে দিবো।
সরি আমি এই কাজ করতে পারবো না। আমাকে যেতে দিন প্লিজ।
ঠাসসসসস ঠাসসসসস
এত জেরে থাপ্পড় মারছে যে ঠোঁট কেটে রক্ত পরছে।
কুত্তারবাচ্চা তোর সাহস হয় কি করে আমার মুখের উপর কথা বলিস। জানিস আমি কে?
আপনার ভাষা ঠিক করেন আমাকে যা বলার বলেন আমার বাবা মাকে কিছু বলবেন না।
ঠাসসসসস ঠাসসসসস
এত জোরে থাপ্পর মারছে যে আমি মাটিতে পড়ে গেলাম।
কুত্তারবাচ্চা কি করবি তুই। তোর কিছু করার ক্ষমতা আছে।
হঠাৎ কে জানি আমাকে ডাকদিয়ে বলল উঠো। পিছনে ঘুরে দেখলাম আমার মত একজন হুজুর। তখন আমি তার হাস ধরে উঠলাম।
নিলা বলে উঠল- এইযে এত দিন একজন হুজুর ছিল এখন আর একটা এসে জুটল।
আপু ও নতুন। ওকে মাফ করে দেন। চল ভাই ক্লাসে যাই।
নিলার পরিচয়টা একটু শুনুন। খুব মর্ডান মেয়ে। ইসলাম সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই। অশালিন পোশাক পড়ে ঘুরে বেরায়। আর অনেক অহংকারি।
ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলাম তখন ছেলেটি জিজ্ঞাস করল- আচ্ছা ভাই তোমার নাম কি?
জি আমি আবির। তোমার নাম কি?
আমি আসিফ। তুমি কোন ইয়ারে পড়ো।
ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে আপনি? আমিও,
আচ্ছা ভালই হলো তাহলে। আচ্ছা ভাই আমাদের ক্লাস কোনদিকে।
আমরা ক্লাসের দিকেই যাচ্ছ।
চল।
ক্লাসের ভিতরে ঢুকলাম। সবাই আমার আর আসিফের দিকে হা করে চেয়ে আছে। কেননা আমরা যে হুজুর।
দাড়ি রেখেছি এইজন্য। আমার একবারে লাস্ট বেঞ্চে বসলাম। আসফ আমাকে জিজ্ঞাস করল- আবির তোমার পরিবারে কে কে আছে?
ভাই আমি এতিম। আমার কেউ নেই। আপনার পরিবারে কে কে আছে?
আমিও তোমার মত এতিম। আমারও কেউ নেই। বাবা মাকে দেকিও নাই।
আমার কখা বলছিলাম। এমন সময় দেখি স্যার এসছে। আমরা সবাই দারিয়ে সালাম দিলাম। তিনি সবাইকে বসতে বললেন।
এমন সময় আকাকে ডাকলেন- এই ছেলে দাড়াও। তোমার নাম কি?
জ্বি আবির।
তুমি কলেজে এই রকম ড্রেস পড়ে কেন এসেছো। আবার মুখে হুজুরদের মত দাড়ি রাখছ। তোমার কি দাড়ি রাখার বয়স হয়েছে। পাজামা টাখনুর উপরে পরছো কেন?
স্যার দাড়ি রাখতে কোন বয়স লাগে না। বয়স হয়েছে বলেই আল।লাহ দাড়ি দিয়েছেন। তা আমাদের রাখা সুন্নাত।
আমি বসে পরলাম। স্যার ক্লাস করানো শুরু করলেন। আমরা মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছিলাম। এমস সময় দরজার সামনে থেকে একটি মেয়ে বলল-
May I come in sir.
আমি তাকিয়ে দেকি সকালের সেই থাপ্পর দেওয়া মেয়েটি। তারপর আমি চোখ নামিয়ে নিলাম । কেননা জাহান্নামের দিকে তাকাতে হয় না।
(নিলাকে জাহান্নাম বললাম কেন। যার সাথে দেখা দেওয়া যায়েজ নেই তার দিকে তাকালে গুনা হয়। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন এই বান্দা তুমি কি করছো জানোনা আমি আল্লাহ তোমাকে দেখি। নবী (সাঃ) হাদিসে বলেন উম্মাত তুমি চোখ দিয়ে দেখা চোখের জিনা, কান দিয়ে কথা শুনা কানের জিনা।)
{বর্তমান যুগে কিছু মেয়ে আছে যারা অশালিন পোশাক পড়ে ঘুরে বেরায়। এই জন্যই ওই সব মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয়। অনেকে হিজাব পরে মন করে তারা ধার্মিক হয়ে গেছে। কিন্তু না, তারা আর তাদের প্রতি পুরুষদের প্রলভিত করছে। কারণ পর্দার উপর দিয়েই সব বোঝা যায়। এখন পর্দা একটা ফ্যাশান হয়ে গেছে। যদি সব মেয়েরা শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী পর্দ করত তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে ধর্ষণ কমে যেত। আমার কথায় কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিয়েন।]
Yes come in. নিলা তুমি, বসো।
ধন্যবাদ স্যার।
আবির শুন তুমি তো নতুন। ওর নাম নিলা ওর বাব এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও কলেজের সভাপতি।
আমি ভাবতে লাগলাম ওর বাবা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বলে ওর এত অহংকার। অহংকার পতনের মূল। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, “অহংকার আমার ভুষণ”।
স্যার ক্লাস নিতে শুরু করলেন। আমি আর আসিফ মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছিলাম। তারপর ঘন্টা বেজে গেল, স্যার চলে গেলেন, এভাবে সবগুলো ক্লাস শেষ হওয়ার পর আমি আর আসিফ যখন ক্লাস থেকে বের হচ্ছিলাম, তখনই নিলা ও তার বান্ধবিরা আমাদের ডাক দিল-
কাল যেন দেখি দাড়ি কাটিয়ে এসেছিস। আর পাজামা টাখনুর নিচে পরবি। তা না হলে কলেজ থেকে বের করে দিব।
আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওখান থেকে চলে আসলাম। কি মনে করছেন আপনারা আমি ভয় পেযেনি । আমি আমার জীবন থাকতে আমি দাড়ি কাটবো না। আমি আর আসিফ রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম। তখন আমি আসিফ কে জিজ্ঞাসা করলাম-
আসিফ তুমি কি করো।
আসিফ বলল আমরা তো ফ্রেন্ড তো ফ্রেন্ডদের ভিতরে তুমি না তুই করে বলছি। একটা দোকানে পার্ট টাইম জব করি। বিনিময়ে মাসে ৮০০০ টাকা পাই।
ঠিক আছে।
ভাই আমাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবি।
আগে দোকানে যাই ম্যানেজারের সাথে কথা বলি।
চল।
তারপর আমি আর আসিফ দোকানে গেলাম।দোকানে গিয়ে আসিফ ম্যানেজারের সাথে কথা বলছে।
আসসালামু আলাইকুম,
ওলাইকুম আসসালাম। আরে আসিফ যে। কেমন আছো তুমি?
জি স্যার ভালো। কিছু কথা ছিল স্যার।
বলো,
এইযে আমার বন্ধু ওর একটা চাকরি প্রয়োজন। আর আমাদের দোকানে কি ওকে চাকরি দেওয়া যাবে?
হ্যা, একজন লোক লাগবে। ওকে, তোমার বন্ধুকে চাকরি দিলাম।
আমি মনে মনে বললাম আলহামদুলিল্লাহ। কেননা আল্লাহ যদি না চাইতেন তাহলে আমি এই চাকরিটা পেতাম না। তারপর ম্যানেজার কে বললাম-
ধন্যবাদ স্যার।
আরে এত ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। তুমি আসিফের বন্ধু। আমি জানি তুমি কখনও আমাকে ঠকাবে না। সেই বিশ্বাস আমার আছে। এখন বলো কবে থেকে কাজ করবে।
স্যার আজকে থেকেই করি।
ওকে তুমি আর আসিফ এখন থেকে কলেজ ছুটির পর কাজ করবে।
জ্বি স্যার।
তারপর দোকান থেকে বের হয়ে আসিফ কে জিজ্ঞাস করলাম- আসিফ তুই কই থাকিস?
দোস্ত একটা বাসা ভাড়া করে থাকি। এখন থেকে তুইও আমার সাথে থাকবি।
ও আমিও একটা বাসা ভাড়া নিয়েছি সেখানেই থাকি।
ওকে ভাই গেলাম ভালো থাকিস। আসসালামু আলাইকুম!
ওলাইকুম আসসালাম!
তারপর আমি বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে রান্না করে ঘুমিয়ে গেলাম। রাত ৩ তার দিকে ঘুম ভাংলো। উঠে অযু করে তাহাজ্জদের নামায পরলাম। কিছুক্ষণ পর মসজিদে আযান হলো তারপর মসজিদ থেকে নামাজ পরে আসি আমি পড়তে বসলাম।
পড়ে উঠে নাস্তা বানিয়ে খেয়ে কলেজে চলে গেলাম। যাওয়ার সময় রাস্তা পর হতে গিয়ে কিসের সাথে জানি ধাক্কা খেলাম। তারপর কর কিছু মনে নেই। তারপর চোখ খুলে দেখি আমি একটা কেবিনে শুয়ে আছি। পাশে থেকে একজন মাঝবয়াসি মহিলা বললেন- বাবা এখন কেমন লাগছে তোমার।
আমি বললাম-
#চলবে,,,,,,
{অনুমনি ছাড়া গল্প কপি করা নিষেধ}
★
★★
★★★
★★★★
★★★★★ (ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)
No comments